বান্দরবানের উজানিপাড়ায় প্রতি শুক্রবার সকালে বেজে ওঠে গিটারের সুর। উপজাতীয় নবোদয় সংঘের গিটার প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিটার শিখছে তারা। বিভিন্ন জাতিসত্তার শিক্ষার্থীরা নিজেদের মাতৃভাষায় গান গাইতে চায়। ছড়িয়ে দিতে চায় পাহাড়ের সুরের বৈচিত্র্য।
বান্দরবান জেলা শহরের উজানিপাড়া সড়ক ধরে গেলে গিটারের মধুর সুর কানে আসে। প্রতি শুক্রবার সকালে শোনা যায় এই সুর। সুরের উৎস ধরে গেলে মারমা, বম, চাকমা ও খুমি সম্প্রদায়ের একঝাঁক খুদে গিটারিস্টের দেখা মেলে। তারা নিজ নিজ ভাষায় শিল্পী হতে চায়। এই স্বপ্নে গিটার শিখছে তারা।
গত শুক্রবার উজানিপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, পাড়ার উপজাতীয় নবোদয় সংঘ (উনস) ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে ২০ থেকে ২৫ শিশু–কিশোর নিবিষ্ট মনে গিটার শিখছে। গিটার শিক্ষক বমরাম লিয়ান আমলাই বম তালিম দিচ্ছিলেন তাদের। মারমা, ত্রিপুরা, খুমি, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খেয়াং, বমসহ আটটি জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী এখানে গিটারের তালিম নিতে আসে। সবাই ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে জেলা শহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। প্রতি শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকটি ব্যাচে যন্ত্রে এই সুর শেখার কাজ চলে। গিটার শেখানোর এই প্রতিষ্ঠানের নাম বেসিক গিটার লার্নিং সেন্টার। ২০১৮ সাল থেকে এখানে গিটার শেখানোর কাজ করছেন বমরাম।
গিটার শিখতে আসা অষ্টম শ্রেণির ওবাই এউং খুমির সঙ্গে কথা হয়। সে বলে, ভালো লাগা থেকে গিটার শেখা শুরু। তা ছাড়া খুমিদের মধ্যে ভালো গিটার জানা কেউ নেই। নিজে শিখে নিজের জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের গিটার শেখাতে চায় সে। স্বপ্ন দেখে, খুমি গানের দল গড়ার এবং সে দলের লিড গিটারিস্ট হওয়ার।
এসএসসি পরীক্ষার্থী তুশেনু মারমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল গিটার শিখে কী লাভ? তুশেনু বলে, লেখাপড়ার মতোই সংগীত গুরুত্বপূর্ণ। ভালো গিটারিস্ট হতে পারলে একটা গানের দল গড়বে সে। মারমা ভাষায় গান করবে। গান ছড়িয়ে দেবে সবার মধ্যে।
নবম শ্রেণির শ্রীজা চাকমাও চাকমা ভাষার গান নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখে। কেবল শ্রীজা নয়, সৃজন তঞ্চঙ্গ্যা, সিলভার বমসহ সবাই বলেছে, প্রত্যেকে নিজেদের ভাষা জানে। গিটার শেখা শেষে নিজেদের ভাষার গানে সুর সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে চায়। সে গান ছড়িয়ে দিতে চায় সবার মধ্যে।
গিটার শিখতে আসা সৃজন তঞ্চঙ্গ্যার বাবা বোধিচন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা একজন স্কুলশিক্ষক। জানালেন, জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে রেইছা থলিপাড়া থেকে ছেলেকে প্রতি শুক্রবার বেসিক গিটার লার্নিং সেন্টারে গিটার শেখানোর জন্য নিয়ে আসেন। গিটার ও গান শেখা সামগ্রিক শিক্ষারই অংশ বলে মনে করেন তিনি।
বেসিক গিটার লার্নিং সেন্টারের পরিচালক ও গিটার শিক্ষক বমরাম লিয়ান আমলাই বলেন, যারা গিটার শিখতে আসে, সবাই ভালো গিটারিস্ট হবে, এমন নয়। সবারই স্বপ্ন নিজের ভাষায় গান করা। এ কেন্দ্রটি সে কাজে শিশু–কিশোরদের গড়ে তুলতে চায়। এতে পাহাড়ের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংগীতের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠবে এবং শিশু–কিশোরদের ডিজিটাল আসক্তিও কমবে।