1. news@kalkothon.online : কালকথন : কালকথন
  2. info@www.kalkothon.online : কালকথন :
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:২৯ অপরাহ্ন

কবিতায় চিত্রকল্প: দুর্দান্ত এক শৈল্পিক নির্যাস

  • প্রকাশিত: শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

অনু ইসলাম

চিত্রকল্প পৃথক কোন অলঙ্কার নয়, সকল অলঙ্কারের শৈল্পিক নির্যাস। চিত্রকল্পের সাথে কবিতার এক আত্মিক সম্পর্ক। চিত্রকল্পের কাজ ব্যাপক, বিস্তৃত অতলস্পর্শী। মূলত, ব্যক্তব্যকে সংহত, যথাযথ ও সুনির্দিষ্ট করার লক্ষে চিত্রকল্প কবিতার কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী উপাদান হিসেবে কাজ করে। চিত্রকল্প সাঁটলিপির মতো সংকেত তৈরি করে, যা কবিতায় মুহূর্তের মধ্যে রহস্যময়ী হয়ে ওঠে। কবিতা-অঙ্গে ‘চিত্রকল্প’ শোভনীয় এবং আদরনীয় এক অন্যতম উপাদান। যেখানে চিন্তার অলঙ্করণ, উদ্দাম ও নান্দনিকতার প্রবেশ। চিত্রকল্পের মধ্যে বস্তু-রূপই নয় শুধু, বস্তুর ভিন্নতর রূপেরও প্রকাশ ঘটে। ‘চিত্রকল্প মসৃণ ও সমাজবীক্ষার তীব্র অভীস্পা বস্তুর বাস্তব-রূপের ভেতর রহস্যময় ভিন্ন-রূপের সন্ধান দেয়। যেনো চিরচেনা জগতের মধ্যে সম্পূর্ণ অন্যজগৎ। চিত্রকল্প সম্পর্কে সাধারণ ধারণা হচ্ছে, ‘কবিতায় শব্দ দিয়ে কবি যে চিত্র রচনা করেন তাই চিত্রকল্প। কিন্তু এই ধরনের ধারণা অনুপপত্তিময়। চিত্রকল্প শব্দচিত্রের চেয়েও অধিক ব্যঞ্জনাবহ। চিত্রকল্পকে বলা যেতে পারে- ‘কবিতার হৃদয়।’ মানবদেহের রক্তপ্রবাহে হৃদপিণ্ড যেমন বিশেষ অবদান রাখে, তেমনি কবি’র বিশেষ ভাবকে কবিতায় সম্পৃক্তায়ন ও সঞ্চালন করার কাজে চিত্রকল্প অতুলনীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে। কবিতায় চিত্রকল্প শুধু অবচেতনের সম্পদ নয়; সচেতন শিল্পমণীষার উৎকর্ষও বটে। সার্থক চিত্রকল্প শব্দে-রঙে-রেখায় কবিতার আবহ সৃষ্টি করে। চিত্রকল্প কবিতার প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়, তেমনি আবার অন্তিম সামগ্রিক রসপরিণামের জন্যে চিত্রকল্পের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। সার্থক চিত্রকল্পকে বিবেচনায় রেখে চিত্রকল্পের অনিবার্য উপযোগিতা হিসেবে এজরা পাউন্ড এর মন্তব্যটি গ্রহণীয়- `It is better to present one image in a lifetime than to produce voluminous work. অর্থাৎ সারা জীবন অজস্র কবিতা সৃষ্টি অপেক্ষা একটি মাত্র শ্রেষ্ঠ চিত্রকল্প উপহার দেওয়া অনেক সার্থক। উদাহরণ হিসেবে বাংলা কবিতার ক্ষণজন্মা ও সাম্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার জনপ্রিয় একটি লাইন চিত্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে- ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি।’ কিংবা সাম্যের আরেক কবি অরুণ মিত্রের কবিতার লাইন হতে আরেকটি চিত্রকল্পের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে— ‘দু’মুঠো লাল ভাতের স্বাদে চোখের জলের নুন এখনও মাখা আছে।’ এভাবে, একটি সার্থকতম চিত্রকল্প একটি প্রদীপ-বাতির মতো কল্পনাকে আলোকিত করার পক্ষে যথেষ্ট। তাই একটি কবিতার পূর্ণরস গ্রহণ তখনই সম্ভবপর যখন চিত্রকল্পগুচ্ছের ফলন্ত দ্রাক্ষাপুঞ্জ কোন ভাবনার আবেগের কুঞ্জবনে রসোচ্ছ্বসিত ফল এ কথার সম্যক প্রতীতি হয়ে জন্মায়।

২.
চিত্রকল্প কবিতার এক ঐশ্বর্য। চিত্রকল্পকে বলা যেতে পারে জাদুদর্পণ। যা একই সঙ্গে স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে আলোকোদ্ভাসিত করে। চিত্রকল্পের জন্ম হয় বিমূর্ত চেতনালোকে। সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের চিত্রকল্প ও প্রতীক প্রবেন্ধ চিত্রকল্প সম্পর্কে বলেছেন— অভিজ্ঞতাকে প্রকাশ করতে গিয়ে সংহত হবার প্রয়োজনে চিত্রকল্পের জন্ম। স্মৃতিধৃত অভিজ্ঞতা মূল্যবোধের প্রেরণায় প্রকাশের জন্য অনিবার্য আবেগে কল্পনার ন্যায়ে সৃষ্টি হয় চিত্রকল্পের পুস্পরাশি। স্মৃতি, আবেগ এবং যুক্তি-ন্যায়ের ত্রি-ধাতুতে কল্পনা গঠিত হয়। মনের সক্রিয় ও নিস্ক্রিয় এই দুই শক্তির যোগাযোগ এবং সহযোগ ঘটে কল্পনার সাহায্যে। সুতরাং চিত্রকল্প কল্পনার বস্তুরূপায়ন। জীবন সংক্রান্ত মনোভাবের পরিবর্তনে এই রূপায়নের পরিবর্তন ধ্রুব। বহির্জগতের অভিঘাত এবং সামাজিক ভাবসূত্র স্রষ্টার হৃদয়ে সংগুপ্ত স্মৃতি-কল্পনা-আবেগ ইত্যাদির ধারা আলোড়িত হয়ে যে শব্দচিত্রের জন্ম হয় তাকেই ইমেজ বা চিত্রকল্প বলে। চিত্রকল্প প্রসঙ্গে, চিত্রকল্প আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তি এবং ইমেজিস্ট আন্দোলনের প্রধান এজরা পাউন্ড, হ্যারিট মনরো সম্পাদিত পোয়েট্টি পত্রিকায় তার চিত্রকল্প সম্পর্কে সংজ্ঞাত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন-`An image is that which presents an intellectual and emotional complex in and instant time. অর্থাৎ বুদ্ধি ও আবেগগত জটিলতা এক নিমিষে যাতে উপস্থাপিত হয় তাই চিত্রকল্প। এখানে জটিলতা শব্দটি কঠিন অর্থে ব্যবহার করা হয় নি; পড়সঢ়ষবী বা জটিলতা শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে ‘অভিজ্ঞতা’কে গ্রহণ করে, অভিজ্ঞতাকে মুক্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে আধুনিক মনস্তাত্ত্বিক কিংবা টেকনিক্যাল অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা কবি’র প্রতিটি চিত্রকল্প কবির অভিজ্ঞতার নিদর্শন। ইমেজিস্ট মুভমেন্টের ফলে চিত্রকল্পের এই ধারণাটি ব্যাপক ভাবে সম্প্রসারিত হয়েছিলো। ইমেজ শব্দের অর্থ বহুধাব্যাপ্ত; সেখানে পঞ্চেন্দ্রিয়নির্ভর অনুভূতি, দৃশ্যমান ও শ্রাব্যমান অনুভূতি, স্পর্শানুভূতি, স্বাদানুভূতিল্পতা ইত্যাদির সামগ্রিক বোধের সমিম্মলন ঘটে। অমলেন্দু বসুর ভাষায় ইমেজের প্রতিশব্দরূপ হলো বাক্-প্রতিমা। এছাড়াও ইমেজ শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে ভাবরূপচিত্র, মানসপ্রতিবিম্ব, বাণীশিল্প, রূপকল্প, রূপচিত্র, চিত্রক, কল্পক, বিম্বক এবং শব্দকল্প ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহার হতে দেখা গেছে অতীতে। তবে ইমেজের বাংলা শব্দ হিসেবে চিত্রকল্পের ব্যুৎপত্তিগত দ্যোতনার আবেদন অনেকটা বেশি এবং সাধারণভাবে ইমেজ শব্দের প্রতিশব্দরূপে বাংলায় চিত্রকল্প শব্দটির ব্যবহার অধিক প্রচলিত ও সর্বজনগৃহীত হয়ে ওঠেছে। বাংলা কবিতায় কবি বুদ্ধদেব বসু— ‘চিত্রকল্প’ শব্দটির উদ্ভাবনার কৃতিত্ব কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে প্রদান করলেও কবি আবু সয়ীদ আইয়ুব-ই সর্ব প্রথম ইমেজের বাংলা প্রতিশব্দরূপে ‘চিত্রকল্প’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন ধ্রুবকুমার মুখোপাধ্যায় তার আধুনিক বাংলা কবিতা; স্বরূপে রূপে গ্রন্থটিতে। প্রসঙ্গত শিখা দত্ত বলেছেন, জীবনানন্দ প্রসঙ্গে ‘চিত্রকল্প’ শব্দটি বাংলা কবিতার পাঠক মানসে মুদ্রিত হয়ে আছে। কেন না চিত্রলতা জীবনানন্দের অনন্য সম্পদ। এছাড়াও বাংলা কবিতায় চিত্রকল্প আন্দোলনের সুর জীবনানন্দে, সুধীন্দ্রনাথ তার প্রাণ-প্রতিষ্ঠা।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট