আখতারুল ইসলাম
সিয়াম তুহিন বেড়াতে যাবে। বাবা মা সহ সেন্টমার্টিনে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ। টেকনাফ থেকে জাহাজে চেপে সেন্টমার্টিন। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ৯ কিমি.। সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের এক মাত্র প্রবালদ্বীপ। বঙ্গপোসাগরের বুকে, আটবর্গ কিমি.আয়তনের খুব সুন্দর এ দ্বীপ। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য। নারকেল, ঝাউগাছ ছাড়াও অনেক বিচিত্র উদ্ভিদ। সৈকত ঘেঁষে সামুদ্রিক মাছসহ আছে নানা ধরণের প্রাণী। যেমন: কচ্ছপ, কোরাল, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, ডলফিন, অক্টোপাস, স্টার ফিশ, নানা ধরণের প্রবাল ইত্যাদি।
সিয়াম তুহিনদের পৌঁছতে দুপুর প্রায় শেষ। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে সামান্য বিশ্রাম নেয়। তারপর বিকেলে বেরহয় সেন্টমার্টিনের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে। সাথে বাবা মা আছে, পানির বোতল, দুটো চিপস ও দুটো ছোট বিস্কুটের প্যাকেট। সৈকতে তাঁরা হাঁটছে। অনিন্দ্য সুন্দর এ দ্বীপ দেখে মুগ্ধ সিয়াম তুহিন। হাঁটতে হাঁটতে বসে প্রবাল পাথরে। পানির ঢেউ আঁছড়ে কূলে পড়ছে। এক একটা ঢেউ সিয়াম তুহিনের আনন্দ আরো বাড়িয়ে দেয়। ওয়াও! সিয়াম দেখ দেখ, কত সুন্দর লালকাঁকড়া, স্টার ফিশ ও ভেসে আসা কোরাল, বলল তুহিন। সিয়ামও এক পাথর থেকে আরেক পাথরে লাফ দিতে দিতে বলে হ্যাঁ। এখানে না এলে বুঝতে পারতামনা বাংলাদেশ কত সুন্দর। পানিতে নামে তুহিন। বাবা ডাক দেয়, মা পানিতে বেশিদূর যাওয়া যাবেনা, কারণ তুমি সাঁতার জানোনা। পানিতে নামে সিয়ামও। মা বলে সাবধান। পানিতে ভেসে আসা ভাঙা শামুক, ঝিনুক, কোরালও প্রবালের বিভিন্ন অংশ কুড়িয়ে নেয় সিয়াম তুহিন। কিছুসময় পর পাথরের ওপর বসে। বসে বসে খাচ্ছে চিপস, বিস্কুট ও পানি। বাবা মাও বসে তাদের সাথে। খাওয়া শেষে পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকট সহ পলিথিন ছুড়ে মারে সৈকতের পানিতে। সিয়ামের বাবা মা বিষয়টা খেয়াল করেনি। ওনারা সমুদ্রের বিশালতা দেখছিল। হঠাৎ একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ব্যাপারটা লক্ষ করে। ছুটে আসে, এবং বলে কীক রলে এটা! সিয়াম অবাক হয়ে বলল, আমি কী করেছি। তুহিনও বলে কই আমরা কিছু করিনি তো! লোকটি বলল, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, প্যাকেট এখানে যে ফেলা উচিত হয়নি। অচেনা লোকটির সাথে কথা বলতে দেখে বাবা বলল, কী হয়েছে? লোকটি বলল, দেখুন এইসব পলিথিন, প্লাস্টিক দ্বীপের সৌন্দর্য নষ্ট করে, পরিবেশ দূষিত করে। সমুদ্রের তলদেশে উদ্ভিদ, সামুদ্রিক মাছ, কোরাল, শামুক-ঝিনুক, প্রবাল, কাঁকড়া, ডলফিনদের জীবনের জন্য হুমকি। এর ফলে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী, অনেক সময় মৃত ডলফিন ও অন্যান্য প্রাণীর মৃতদেহ ভেসে আসে। সিয়াম, তুহিনের মাও খেয়াল করে কথাগুলো। বলল, তোমরা ভুল করেছ। উনি ঠিকই বলেছেন। বাবাও বলল, তোমরা অন্যায় করেছ।
সিয়াম অপমান মনে করে কেঁদে ফেলে। তুহিনেরও চোখে পানি। সিয়াম বলল, বাবা আমি আশেপাশে কোনো ডাস্টবিন দেখিনি। তাই ভুল করে ফেলেছি। তুহিনও বলে, জি এটা করা একদম ঠিক হয়নি। লোকটি হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল, ঐ দেখো, ডাস্টবিন। সিয়াম তুহিন উঠে প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট ও পলিথিন কুড়িয়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে।
রাগে হোটেলে ফিরে আসে। কেমন একটা মুখভার করে চুপচাপ বসে আছে তুহিন সিয়াম। বাবা বিষয়টা বুঝতে পারে। সেন্টমার্টিনে আসার আগে গুগলে ও ইউটিউবে সার্চ দিয়ে কিছু ভিডিও ও তথ্য মোবাইলে রাখে। মোবাইল হাতে নিয়ে বাবা বলল, সিয়াম তুহিন এদিকে এসো। ধীরে ধীরে এসে বসে বাবার পাশে। বাবা দেখায় নানান তথ্য। একটা ভিডিও দেখে চমকে ওঠে সিয়াম। বলল, সেন্টমার্টিনের পাশে সমুদ্রের তলদেশ এত সুন্দর! এত বৈচিত্রময়। তুহিনও অবাক হয়তলদেশর রহস্য দেখে। কত কোরাল, প্রবাল, সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, অক্টোপাস সহ আরো কত কী।
বাবা বলল, এবার আরেকটা ভিডিও দেখ। সেটা দেখে মনখারাপ হয় সিয়াম তুহিনের। দেখে পানি দূষণের কারণে ভেসে আসছে মৃত ডলফিন, নানান সামুদ্রিক মাছসহ অনেকপ্রাণী। কীভাবে পলিথিন, প্লাস্টিক সমুদ্রের পরিবেশকে দূষণ করছে।
দুজন চুপচাপ। নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। হোটেলের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সাগর দেখেতে দেখতে সিয়াম তুহিন কেবলে, চল এখন থেকে আমরা পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখতে চেষ্টা করব অন্যদেরও সচেতন করব। তুহিন বলে, ঠিক আছে ভাইয়া।
পরদিন আবার বের হয় সৈকতে ঘুরতে ঘুরতে লাইট হাউস হয়ে নারকেল দিয়া আসে। যে পলিথিন প্লাস্টিক ফেলছে সাথে সাথে সিয়াম তুহিন দৌঁড়ে গিয়েতা কুড়িয়ে নেয় এবং সচেতনতা মূলক কথা বলছে। অনেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বিষয়টা খেয়াল করে। খেয়াল করে অনেক পর্যটকও। গতকালের লোকটি আসে ধন্যবাদ দেয় তাদের এ কাজের জন্য।
খুশি হয় সিয়াম তুহিন ও তাদের বাবা মা। বাড়িতে এসে সিয়াম তুহিন পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে, সচেতন তা সৃষ্টি করতে কাজ শুরু করে। স্কুলেও চলে তাদের কার্যক্রম।