সুব্রত আপন
‘মাসুদ, আইজ ইশকুলে যাবি না?’ ‘না রে হাকিম, আইজক্যা যামু না।’ ‘ক্যান কী অইছে?’ ‘আইজ কাদের স্যার অনেকগুলা পড়া দিছে, কিচ্ছু শিখি নাই। ইশকুলে গেলে পিঠের ছাল তুইলা ফেলাইব।’ ‘কাইল কি মারব না?’ ‘মারবো তো, মাগার পড়ার লাইগা না। একটি দরখাস্ত লিখ্যা আব্বার সাইন জালিয়তি কইরা নিমু।’ ‘কস কী হালায়, তোরে এ বুদ্ধি কেটায় দিলো। আমগো পাশের বাড়ির মোল্লা কাকার ছেলে তো প্রায় সময় ইশকুলে না গেলে অই রহমই করে। আমার কাছ থেইকা সাইন লইয়া লয়। এই বয়সেই মোল্লা কাকার ছেলের এত বুদ্ধি। ঠিক আছে আমি গেলাম তাইলে, বিকালে কদমতলায় আইবি কিন্তু। ক্যান কী অইছে? আমগো পাশের মহল্লার পুলাপাইনগো লগে ক্রিকেট ম্যাচ দিছি।
ছোটোবেলা থেকে ডানপিটে মাসুদ। গাছে উঠে বিভিন্ন ফলফলাদী চুরে করে ভাগাভাগি করে খাওয়া পুরোনো অভ্যাস। বাবার পকেটে থেকে বিশ পঞ্চাশ টাকা চুরি করা এ তেমন নতুন কিছু নয়। কত যে মার খেয়েছে তার হিসাব লেখা নাই। মার খাওয়ার সময়ও চিন্তা করে কোথায় যেন পাকা পেঁপে দেখেছিল। একদিন মারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় সহ্য করতে না পেরে সকালে পালিয়ে যায়। রাত দশটায় মাসুদের আব্বা ছলিম দর্জি দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে দেখে ছেলে তখনো বাড়ি ফিরে নাই। ওমা এ কী কাÐ, এখনো ছেলেটা বাড়ি না ফেরায় সকলের পুরোনো চিন্তা হলেও ছলিম দর্জির চিন্তা নতুন নতুন করে বেড়ে গেল। কই গেল পোলাডা, কই যাইবার পারে? মনে মনে নানা প্রশ্ন চেপে বসলে মাসুদের মা বলে উঠল আমাগো গেরামের হাকিম্মার বাড়িত একটু যাইয়া দেহ। অ, তুমি ঠিক কথাই কইছ, খারাও যাইয়া দেহি। ওরে ফাতেমা (মাসুদের মানসিক প্রতিবন্ধী বড়ো বোন) হ্যারিকেনটা জ্বালাইয়া দে তো মা। অমাবইশ্যা রাইত বইলা ঘুটঘুইট্যা আন্ধার।
হ্যারিকেন-হাতে গ্রামের মেটোপথ ধরে জঙ্গল বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে গাঁ-টা কেমন যেন করছে। জঙ্গলের ভেতরের কিচির মিচির শব্দ যতই কানে আসছে ততই ভয় ভয় লাগছে। হঠাৎ কে যেন ডেকে উঠল এতো রাইতে কই যাও ছলিম মিয়া। প্রাণটা কেমন যেন করল। বুকে থুথু দিয়ে নিজেকে সামলে মৃদুু কণ্ঠের আওয়াজে ছলিম দর্জি বলে উঠল, কেটা? কে কইতাছ? ভাইজান আমি মুবিন । এত রাইতে জংলার ভিতর কী করো? কইয়ো না রে ভাই, বাজার থেইকা আইবার পথে পেট মোচড়াইয়া হাগু আইছে, বহুত কষ্টে চাইপা রাখছিলাম। এহানে আইসা কামডা সারছি। অ, আমি একটু ছাদেক আলীগো (হাকিমের আব্বা) ঘরে যাই। ক্যান কী অইছে? আ রে কইয়ো না ভাই। চেমরাডারে বেয়ানবেলা মারছিলাম বইলা ভয়ে যে পলাইছে অহনো বাড়িত ফিরে নাই। পাশের মহল্লার ছাদেক আলীর পোলার লগে আমগো পোলার মেলা খাতির। অর কাছে গেছে কি না দেখবার যাইতেছি। ঠিক আছে ভাইজান, যাও তাইলে।
হাঁটতে হাঁটতে হাকিম আলীর বাড়ি পৌঁছে জোরে একটা ডাক দিলো, হাকিম ভাই একটু উডেন। কেটা রে এত রাইতে? আমি ভাইজান। আমি কেডা? কে নাম কন না ক্যা রে? আমি ছলিম দর্জি। দরজা খুলে ছলিম ভাই কী অইছে, এত রাইতে আমগো বাড়ি? ঘটনা একটা হইছে বইলাইতো তোমগো বাড়িত আইছি মিয়া। আমগো চেমরা মাসুদরে আইজ বেয়ানবেলা পিডাইছি। সে মাইর খাওনের টাইমে যে দৌড় দিছে অহনঅ বারিত ফিরে নাই। অর মা তো হাউমাউ কান্দন শুরু কইরা দিছে, কী যে করি। তোমার পোলার লগেই মাসুদ বেশী থাহে, তয় এহানে আইছে কি না জিগাইতে আইলাম। ঠিক আছে ছলিম ভাই, হাকিমরে জিজ্ঞেস কইরা দেহি। অ হাকিম, তোর ছলিম কাকা আইছে একটু কথা-ক। আরে কাকা আসসালামু আলাইকুম। কাকা ভালা আছেন? যদি ভালা থাইকতাম বাপ এত রাইতে তোমগো বারিত আইতাম! কী হইছে কাকা? আইজ মাসুদরে দেখছিলা? হেই সকাল থেইকা বারির বাইর অইছে, এহনঅ বারিত ফিরে নাই। তোমার লগে দেহা অইছিল? হ কাকা, বিয়ালে আমগো খেলার মাঠে যাওনের পথে পুরান বারির বারান্দাত বইসা থাকতে দেখছিলাম। খেলতে যাইতে ডাকছিলাম কিন্তু যায় নাই। কই যাইবার পারে তোমার ধারণা আছে বাপ? না কাকা। ঠিক আছে, এহন ঘুমাও। ছাদেক ভাইজান অহন যাইতাছি তাইলে। ঠিক আছে ভাইজান।
বাড়ি ফিরে ছেলেকে না পাওয়ার কথা শুনে সে কী অবস্থা! ওরে আল্লাহরে আমার ছেমড়াটা কই গেছে, কই আছে, কী করছে বলে হাউ হাউ কান্নাকাটিতে পুরো ঘর মাথাই তুলেছে ছলিম দর্জ্জির বিবি। ছলিম মিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল আরে এমন করলে কী অইব, দেহি কী করন যায়। এই তোমার লাইগা আমার ছেমরাটা আইজ ঘরছাড়া অইছে। কই আছে আল্লাই জানে। ফাতেমা খাওয়ার পর ঘুমিয়ে গেছে। ছলিম দর্জি ও তার বিবির ঘুম আসে না। সারা রাত চেরাগ জ্বালিয়ে না ঘুমিয়ে শেষ হইল রাত। সকালে নাস্তা বানানো হয়ে ওঠেনি ছেলের চিন্তায়। কিন্তু আমানপোষ গরুগুলোর কী দোষ। তাদের খাবার দেওয়ার জন্য গোয়ালঘরে ঢুকলে দেখা যায়, মাসুদ গোয়ালঘরের এক কোণে খড় বিছিয়ে পড়ে আছে। দৌড়ে তার কাছে গিয়ে দেখলো তার শরীর কাঁপছে। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
কই গো ফাতেমার আব্বা। দেইখা যাও মাসুদ এইহানে। দৌড়ে এসে ছেলের এমন অবস্থা দেখে দুজনে হাতাহাতি রুমে আইনা ছলিম দর্জি দৌড় দিলেন এলাকার গ্রাম্য ডাক্তার রহমত উল্লার কাছে। ডাক্তার অহন ঘুম থেকে উঠে নাই। তার স্ত্রীর কাছে অনুরোধ করাইয়া ডাইকা তুলা হলো। রহমত ভাই আমার পোলাড়া জ্বরে কেমন যেন করতেছে। আপনি একটু তাড়াতাড়ি চলেন। ডাক্তার সাহেব আর দেরি না করে লুঙ্গির লগে শার্ট পরে প্রয়োজনীয় ডাক্তারী সরঞ্জাম নিয়ে ছলিম দর্জি বাড়ী হাজির। সত্যিতো গায়ের ১০৩০ ডিগ্রী জর। ভাবী আপনি ছেলেটার শরীর পানি দিয়া আপাতত মুইছা দেন, জর পাট্টি লাগান আমি ঔষধ লিখে দিচ্ছি, দোকান খুললে আপনি ঔষধগুলো নিয়া নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াবেন। এখন আসি বলে ডাক্তার ফিস দিয়ে বিদায় নিলেন ছলিম দর্জি।
এমনিভাবে চলতেছে বেশ ভালোই। ক্লাস টেনে পড়া অবস্থায় পাড়ার ফরিদ মাষ্টারের ৮ম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে সুইটিরে তার ভালা লাগে। এ কথা হাকিমকে হইলে হাকিম তুই প্রেম করলে কর ভাই আমি তর লাইয়া কিছুই করতে পারুম না। তার উপর আমগো স্যারের মাইয়া। প্রেমে পইড়া গেছি রে দোস্ত। মাইয়াড়া নাম যেমন, সেও তেমন সুন্দর। আহারে কি সুন্দর চোখ, নাক, ঠোট। সব চেয়ে বেশী ভালা লাগে তার ঠোটের কোনের মিষ্টি হাসি। আরে বেড়া আমার দেখলে মিড়া মিড়া হাসে। আমি কিছুটা একটা কইয়া দেখমু কাল। রাতের বেলায় পিরিতির বাতাসে ঘুমাইতে পারে নাই মাসুদ। এ পিরিতির পরশে বাড়ীর পাশের ডোবা দেখাইয়া সাগর মনে হইতাছে, মাদার গাছের ফুল দেখাইয়া মনে হইতাছে গোলাপ ফুল দেখেতেছি। ইস্কুলের দুপুর ছুটিতে সুইটিরে দেখাইয়া মনের মধ্যে তুফান শুরু হইলো। কি কমু কি কমু ভাবতে ভাবতে সুইটির কাছে গিয়া জিগায়লো সুইটি ভালা আছনি? স্যার আমগো মতো তোমার পিড়ায়? ক্যান এক কথা কওনের লাইয়া এহানে আইছো? না জিগাইলাম আরকি। তুমি কিছু খাইবা? না কিছু কমু না। এরই মধ্যে ইস্কুলের দুপুর ছুটির শেষে ঘন্টা বাজলে সুইটি বললো অহন যাই ঘন্টা পইড়া গেছে। সুইটি তোমার লগে কিছু কথা কইবার চাইছিলাম। ঠিক আছে কাল ইস্কুলে আইলে কইয়ো। পরদিন দুপুর ছুটির পর আবার দেখা হইলে সুইটি বললো কি যেন কইবা বলছিলা। হ কি কথা দিয়া যে শুরু করমু সেটাই ভাবতাছি। তাইলে কয়াই ফেলি-তোমারে না আমার অনেক ভালা লাগে। তোমারে দেখলে মনের ভিতর কেমন যেন করে। সুইটি হাইসা জবাব দিল ও এই কথা। আমি ভাবছিলাম……। ভাবছিলাম কালকের মতো জিগাইবা তোমার বাপ মাষ্টার কাকা তোমারে পিড়াই কিনা? আরো এমনে কইছিলাম। মুখ থেইকা কোন কথা বাইর হচ্ছিলনা বইলা কয়াছিলাম। নিজেদের মধ্যে প্রত্যেক দিন ঠাট্টা মশকারী করতে করতে নিজের মধ্যে ভাব বিনিময় করতে করতে কবেই যে একে অপরের প্রেমে হাবাডুবি খাচ্ছে নিজেরাই জানি না। দুইজনের মধ্যে চুক্তি হলো তারা আজ ক্লাস করবেনা কিন্তু ক্লাস টাইমে বাড়ী থেকে বের হয়ে ক্লাস টাইম পর্যন্ত ঘুরাফেরা করে ইস্কুল টাইম শেষ হইলে যার যার বাড়ী ফিরে যাব। কথামতো পরের দিন স্কুল টাইমে বের হয়ে দুইজনে একটি বেবী টেক্সিতে গাড়ীতে বেড়াতে যাওয়ার দৃশ্যটা পাড়ার মোড়ের দোকানদার কালাবাশি দেখে সোজা ফরিদ স্যারকে বললো স্যার আপনার মেয়ের লগে ছলিম দর্জ্জির পোলা। টেক্সিতে কইরা কোথায় যেন যাইতে দেখলাম। আমগো দোকানের সামনে আপনের মেয়ে আইলো, পরে দেখি ছলিম দর্জির পোলা আমারে দেইখা একটু সামনে গিয়া গাড়ীতে উইঠা কইযেন গেল গা। আস্তে করে মাষ্টার সাহেব বললেন তুমি কি ঠিক দেখেছো কালাবাশি? হ-স্যার হাচা কইতাছি। ঠিক আছে তুমি যাও কাউকে বলিও না এ কথা, আমি দেখতেছি। প্রচন্ড রাগে ও ক্ষোভে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষে বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে খোজা শুরু করলেন সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে। হতাশ হয়ে যখন বাড়ীর উঠানে বসে থাকলেন তখন পাড়ার কালাইম্মা খবর আনে তাগো নাকী কাচারী ভিটার বটগাছ তলায় ছলিম দর্জির পোলা ও আপনার মাইডারে দেখেছে। ভিটায় থাকা চাচাতো জেটাতো সকল ভাইকে ডেকে কাচারী ভিটা থেকে কলার ধরে টেনে টেনে নিয়া আসার পথেই লাথি, ঘুষি, খিল মারতে থাকে মাসুদরে। সমাজের অনেক স্থানীয় লোক স্থানীয়ভাবে সালিশ বিচারের কথা বলে আপাতত ছাইড়া দেন কিন্তু ফরিদ মাস্টারের মুখে না ছাড়া হা ফোটেনি সালিশে। মানবেই বা কেন মাষ্টারের পাশাপাশি ফরিদ সাহেব আবার স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। রাজনৈতিক মিটিং মিছিলে সরব উপস্থিতি। এমপি সাহেবের সাথে উঠা বসা বলে দম্ভ। সেখানে মাষ্টার পেশাটি সাইনবোর্ড মাত্র। কারো কোন কথা মাথায় না নিয়ে একগুয়ামীতে নিজে বাদী হয়ে মাসুদ, মাসুদের আব্বা ছলিম দর্জি ও তার স্ত্রীকে আসামী করে দিলেন একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭/৩০ ধারায় রেকর্ড করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় বাদীর মেয়ে জাকিয়া সুলতানা সুইটি (১৪), ৮ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। আসামী বাদীর মেয়ে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেম নিবেদন সহ বিবাহের প্রস্তাব দিয়া উত্যক্ত করিত। উক্ত বিষয়টি ২ ও ৩নং আসামীকে জানাইলে তাহারা বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়া ১নং আসামীকে বিয়ে করানোর প্রস্তাব দেয়। বাদীর মেয়ে ছোট হওয়ায় বাদী রাজী না হওয়ায় সকালে বাদীর মেয়ে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হলে স্থানীয় বড় কবরস্থান সংলগ্ন কালাবাশির দোকানের সামনে পৌছিলে ১নং আসামী মাসুদ সহ অজ্ঞাত ২/৩জনের সহায়তায় বাদীর মেয়েকে ফুসলাইয়া অপহরণ করিয়া নিয়া যায়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে বাদী থানায় আসিয়া এজাহার দায়ের করিলে থানার বড় বাবু মামলা রুজু করিয়া মামলার তদন্তের ভার একজন সাব ইন্সপেক্টের (এস.আই) উপর অর্পন করিলে অফিসার তদন্তভার গ্রহণ করে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করেন। মামলা রুজু হওয়ার খবর পেয়ে অবেলায় দোকান বন্ধ করেই ছেলেরা নিয়ে অন্য এলাকায় রেখে আসেন। অফিসার পরেরদিনই সঙ্গীয় ফোর্স সহ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়ভাবে সাক্ষীদের ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অত্র মামলার ঘটনাস্থল হইতে আলামত জব্দ করার চেষ্টা করিলেও কিন্তু আলামত জব্দ করার মতো কোন আলামত পাওয়া গেল না। কেননা তারা শুধু মাত্র একজনের মনের কথা অন্যেজনের পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি নিরিবিল পরিবেশে যায় মাত্র কিন্তু পুলিশের দায়িত্বরত অফিসার অত্র মামলার বাদীর মেয়ে যেহেতু সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এক সঙ্গে ছিল সেজন্য ১নং আসামী কর্তৃক ধর্ষিত হইয়াছে কিনা দেখার জন্য মেডিকেল পরীক্ষা করণের নিমিত্তে জেলা সদর হাসপাতাল প্রেরণ করেন এবং মামলার ঘটনা সংক্রান্তে বিজ্ঞ আদালতে নাঃশিঃনি দমন আইনের ২২ ধারা মতে জবানবন্দী রেকর্ড করণের জন্য নারী পুলিশের মাধ্যমে কোর্টে প্রেরণ করেন। মামলার রেকর্ড হওয়ার ১নং আসামী ১০ শ্রেণি পড়–য়া ছাত্র হওয়ার বয়স যাচাই বাছাই করণের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট বয়স যাচাই বাছাইয়ের কথা বললে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী তার চলতি সাল পর্যন্ত ১৬ বছরের কাছাকাছি দেখে মামলার তদন্তকারী অফিসার ১নং আসামীকে নাবালক বলে ঘোষনা করে বাদীর বাদীকে থানায় আসার জন্য বলেন। ফরিদ মাষ্টার থানায় গেলে তদন্তকারী অফিসার ১নং আসামী নাবালক ও অন্যান্য আসামীগণ এ মামলার সহিত সম্পৃক্ততা নাই বলে তার তদন্তে প্রমানিত হওয়ার কথা অবহিত করেন। মামলা তদন্তের কাজ চলাকালীন সময়ে ছলিম দর্জি ঠিকটাক মতো দোকানে যেতে পারেনা নানাবিধ সমস্যায়। এরই মধ্যে ছলিম দর্জির বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বামুন মেয়ে শরীর জালা পুড়া করলে স্থানীয় ময়মুরব্বীরাদের পরামর্শ দেয়Ñও ছলিম্মা তোমার মাইয়াডারে আমগো গেরামের কবিরাজ (বৈদ্য) সোনাইয়ারে দেখাইতেছ না কে? ঠিক আছে দেখামো। ও ফাতেমার মা আমি দোকানে যাইতাছি। সোনাইয়া কবিরাজরে ডাইক্যা মায়াডারে দেখায়ো কয়া দিলাম। দুপুরবেলা খবর দিলে কবিরাজ সোনাইয়া বিকাল ৩ টার ছলিম দর্জির বাড়ীর হাজির। বাড়ীতে আসার ফাতেমারে দেইখা টিকিৎসা করিবে, বান কাটবে বলে ফাতেমাকে বসতঘরের একটি কক্ষে ঢুকাইয়া দরজা বন্ধ করয়া দেওনের পর ছলিম দর্জির বউ বাড়ীর অন্যান্য কাজ কর্ম করতে থাকে। ফাতেমা কিছুক্ষণ পর জোরে চিৎকার করে উঠলে কবিরাজ ঘরের দরজা খুলে দৌড়াইয়া পালিয়ে যায়। তখন দর্জির বউ কি হইছে ছিল্লাইছে কে বলায় কইলো কবিরাজ কাকা আমারে অনেক আদর করছে। তার কি একটা বাহির করিয়া আমার এই জায়গা দেওনের আমি ব্যাথা পাইয়াছি বলিয়া ছিল্লাই উড়ি। দর্জি বউয়ের বুঝতে বাকী নেই চিকিৎসার উজুহাতে সোনাইয়া কবিরাজ তার মেয়ে ধর্ষন করেছে। এ খবর জানা জানি হইলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সোনাইয়া বৈদ্যরে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করার পর ছলিম দর্জিকে বাদী করে সোনাইয়া কবিরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করে রিমান্ডের মারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষ কোর্টে প্রেরণ করে। এ খবর মাসুদের কানে যাইতে বেশী সময় লাগে নাই। মাসুদ না পারে বাড়ী আইনে, না পারে থানায় গিয়া কোন যোগাযোগ করতে।